রিজার্ভে যুক্ত হলো আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির ডলার
বাংলাদেশের জন্য অনুমোদিত আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার রিজার্ভে যুক্ত হয়েছে। শুক্রবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক।
তিনি বলেন, আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি হিসেবে অনুমোদিত ৬৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার রিজার্ভের সাথে যুক্ত হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে বিশ্বব্যাংক ও এডিবিসহ অন্যান্য ঋণের আরও ৬২ কোটি ডলার যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। সব মিলিয়ে চলতি মাসে রিজার্ভে যুক্ত হবে ১৩১ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার দেশের রিজার্ভ ছিল ২৪.৬২ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের ঋণ যুক্ত হওয়ায় রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫.৩১ বিলিয়ন ডলার। তবে আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী, বিপিএম-৬ অনুযায়ী হিসাব করা হলে রিজার্ভ দাঁড়াবে ১৯.৮৫ বিলিয়ন ডলার।
এর আগে গত মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থিত আইএমএফের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকে বাংলাদেশের জন্য ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের প্রস্তাব অনুমোদন করে।
এদিকে বাংলাদেশ গত জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারায় আইএমএফের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে যে অব্যাহতি চেয়েছিল, তা অনুমোদন করেছে সংস্থাটির পর্ষদ। একই সঙ্গে ডিসেম্বর শেষে রিজার্ভ সংরক্ষণের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে ডিসেম্বর শেষে নিট রিজার্ভ থাকার কথা ছিল ২৬.৮ বিলিয়ন ডলার। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৭.৮ বিলিয়ন ডলার। জুন শেষে কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। তবে এক্ষেত্রে ডিসেম্বরের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করা হয়নি।
আইএমএফের রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশ পরিমাণগত পারফরম্যান্স ক্রাইটেরিয়ার তিনটি বিষয়ের মধ্যে রিজার্ভ ছাড়া বাকি দুটি অর্জন করেছে।
এ দুটি শর্ত সরকারের বাজেট ঘাটতি এবং সরকারের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ সংক্রান্ত। চারটি ইন্ডিকেটিভ টার্গেটের মধ্যে কর সংগ্রহ ছাড়া বাকি তিনটি পূরণ করেছে। এই তিনটি সরকারের সামাজিক ব্যয়, মূলধনী বিনিয়োগ এবং মুদ্রা সরবরাহ সংক্রান্ত শর্ত। এ ছাড়া ব্যাংক কোম্পানি আইন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনসহ কাঠামোগত সংস্কারের বেশিরভাগ শর্ত পূরণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের নিট রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলো আইএমএফ
এদিকে চলতি ডিসেম্বরের জন্য বাংলাদেশের নিট রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৭৭৮ কোটি ডলার নির্ধারণ করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। শুক্রবার প্রকাশিত প্রথম রিভিউ প্রতিবেদনে ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্যাকেজের আওতায় রিজার্ভের অর্জনের এই নতুন শর্ত দিয়েছে আইএমএফ।
আইএমএফ জানিয়েছে, অক্টোবরে দেশের নিট রিজার্ভ ছিল ১৫.৯ বিলিয়ন ডলার, আর গ্রস রিজার্ভ ছিল ২০.৩ বিলিয়ন ডলার।
জুনের নিট রিজার্ভ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আইএমএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুনে ২৩.৭ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে নিট রিজার্ভ ছিল ১৯.৫ বিলিয়ন ডলার।
ঋণ প্যাকেজের পরবর্তী কিস্তি ছাড়ের শর্ত হিসেবে আইএমএফ নিট রিজার্ভ সিলিং ঠিক করে দিলেও বাংলাদেশ ব্যাংক সে তথ্য প্রকাশ করে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে দেশের রিজার্ভ ছিল ১৯ বিলিয়ন ডলার, যার পুরোটাই ব্যবহারযোগ্য।
আইএমএফের মানদণ্ড অনুযায়ী, শুধু নিট রিজার্ভ অংশই তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহার করা যায়। এ কারণেই বহুপাক্ষিক ঋণদাতা সংস্থাটি ঋণের পরবর্তী কিস্তিগুলো ছাড় করার জন্য নিট রিজার্ভের জন্য একটি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেয়।