মসজিদে নববী থেকে লাইভে বাংলাদেশে সাবান বিক্রি
পবিত্র মদিনায় মসজিদে নববীর পাশে বসে মুখে সাবান লাগিয়ে ফেসবুক লাইভে থাকেন বাংলাদেশি নারী জিনিয়াত। মসজিদে নববীর মিনার দেখিয়ে নিজের তৈরি করা সাবানের গুণগান প্রচার করেন তিনি। ধর্মীয় অনুভূতি ব্যবহার করে হজে গিয়ে ক্রেতাদের জন্য দোয়া চাওয়া ও সাবান কোরবানির মতো প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন জিনিয়াত।
শুধু তাই নয়; মক্কায় গিয়ে আল্লাহর ঘর কাবাকে দেখিয়ে নিজের ক্রিম বিক্রির বিজ্ঞাপন তৈরি করেন জিনিয়াত। মুখ নয়, পুরো শরীর দুধের মতো সাদা করারও গ্যারান্টি দেন তিনি। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলছেন, এটা কোনো দিনই সম্ভব নয়।
‘কাশ্মীরি বিউটি বাই জিনিয়াতের’ প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও জিনিয়াত জাহান। কোনো প্রকার ল্যাব ছাড়াই, ঘরে বসে নিজের হাতে সাবান, লোশন ও ক্রিম তৈরি করেন তিনি। যাতে নেই বিএসটিআইয়ের কোনো অনুমোদন।
সাফরোন গট মিল্ক শোপ সাবান তৈরিরে রীতিমতো ভাইরাল জিনিয়াত। এরপর তৈরি করছেন ক্রিম, নারকেল তেলসহ নানা রকমের প্রসাধনী। নিজের তৈরি সাবান কতটা হালাল তা বোঝাতে ওমরায় গিয়ে নিজেই ব্যবহার করেন তিনি। তার ভাষ্য, যেহেতু ওমরায় এসে এই সাবানটা ‘আমরা ব্যবহার করছি, বুঝতেই পারছেন এটা কতটা হালাল।’
ফেসবুক লাইভে জিনিয়াত দাবি করেছেন, তার সাবান নাকি বাংলাদেশের সবাই একবার করে হলেও ব্যবহার করেছেন।
মসজিদে নববীর ভিডিও দেখিয়ে হাতে লোশন নিয়ে ফেসবুকে লাইভে হাজির হন জিনিয়াত। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর কাছে বলেছি আমার পণ্য যে যে নিয়তেই ব্যবহার করে না কেন। তার যেন সমস্ত সমস্যা সমাধান হয়ে যায়।’ ইন্না ইল্লাহি… রাজিউন বলে নিজের সাবানকে কোরবানি করে তার মাগফিরাতও কামনা করেন জিনিয়াত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মান নিয়ন্ত্রিতহীনভাবে তৈরি করা এসব প্রসাধনী ব্যবহারে মুখে ব্রোন, মেছতা ও ঘাসহ হচ্ছে ত্বকের চিরস্থায়ী ক্ষতি। এসব প্রসাধনী ব্যবহারে বাড়ছে স্কিন ক্যান্সারসহ নানা রকমের রোগের ঝুঁকি।
ইউনাইটেড হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. তাসনিম খাম কালবেলাকে বলেন, ‘এই ধরনের প্রসাধনী ব্যবহারে ত্বকের হচ্ছে মারাত্মক রকমের ক্ষতি। প্রায় প্রতিদিনই এমন রোগী আসছে যারা এসব প্রসাধনী ব্যবহার করে স্কিনের ক্ষতি করে ফেলেছেন।’
ঢাকার আভিজাত শপিংমলে রয়েছে জিনিয়াতের শো রুম। সেখানে গিয়ে দেখা যায় পুরো শো রুমে সাজানো সাবান, ক্রিম, সানস্ক্রিন ক্রিম, কোকোনাট ওয়েলসহ বহু কিছু।
নিয়ম অনুযায়ী এসব পণ্য তৈরি করতে নিতে হয় বিএসটিআই বা যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি। তার কোনো পণ্যের গায়ে নেই বিএসটিআইয়ের সিল। শুধু তাই নয়, কোনো পণ্যের গায়ে উৎপাদন বা মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখও নেই। এমন পণ্য বাজারজাতে রয়েছে শাস্তির বিধান।
বিএসটিআইয়ের উপপরিচালক মো. রিয়াজুল হক কালবেলাকে বলেন, ‘সাবান, ক্রিম তৈরি করে বাজারজাত করতে অবশ্যই বিএসটিআইয়ের অনুমোদন লাগবে। কেউ অনুমোদনবিহীন পণ্য তৈরি করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরেমহাপরিচালক (অতি. সচিব) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান কালবেলা বলেন, ‘অনলাইনে বিক্রি হওয়া এসব পণ্য কিনতে ক্রেতাদের সাবধান হতে হবে। এসব পণ্যসামগ্রী ব্যবহারে নানা রকমের ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে। আমাদের কাছেও এমন অনেক অভিযোগ এসেছে।’