সকাল ১০:৩১ | সোমবার | ১৯শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল
বিশ্বে কয়লার চাহিদা কমার পূর্বাভাস

বিশ্বে কয়লার চাহিদা কমার পূর্বাভাস

বিশ্বে কয়লার চাহিদা কমতে পারে বলে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ)। মূলত চীনের নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে আরও বেশি হারে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হওয়ায় এ পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার সংস্থাটি বলেছে, বৈশ্বিক কয়লার চাহিদা চলতি বছর সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছাবে এবং আগামী তিন বছরে চাহিদা ২ শতাংশ কমবে। সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে, এই প্রথম প্যারিসভিত্তিক জ্বালানি সংস্থাটি তিন বছরের মেয়াদে কয়লার চাহিদা হ্রাসের পূর্বাভাস দিল।

চলতি বছর কয়লার চাহিদা ৮৫৪ কোটি মেট্রিক টনে পৌঁছাতে পারে বলে আইইএর পূর্বাভাস, এর আগে ২০২২ সালে আগের রেকর্ড ছিল ৮৪২ কোটি মেট্রিক টন। কয়লাবিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদনে আইইএ এই তথ্য জানিয়েছে।

আইইএ আশা করছে, আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে কয়লার চাহিদা কমতে পারে; ২০২৬ সালের মধ্যে এই চাহিদা ২ দশমিক ৩ শতাংশ কমতে পারে বলে তাদের পূর্বাভাস।

আইইএর জ্বালানি বাজার ও নিরাপত্তাবিষয়ক পরিচালক কেইসুকে সাদামোরি বলেছেন, এই পূর্বাভাস থেকে বোঝা যাচ্ছে, কয়লা ব্যবহারে পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে।

সাদামোরি বলেছেন, এর আগে কয়লার ব্যবহার কমেছে সেই নজির আছে, কিন্তু তা খুবই স্বল্প সময়ের জন্য এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ও কোভিড–১৯-এর মতো মহামারির কারণে তা ঘটেছে। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। কয়লা ব্যবহার হ্রাসের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে কাঠামোগত কারণে অর্থাৎ পরিবেশবান্ধব জ্বালানি প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে এই পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে।

সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে, আগামী তিন বছরে বিশ্বে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদিত যত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে তার অর্ধেকেরও বেশি হবে চীনে। তথ্যানুসারে, বিশ্বের মোট কয়লার চাহিদার অর্ধেকেরও বেশি চীন থেকে আসে।

এদিকে সদ্য সমাপ্ত কপ-২৮ শীর্ষ সম্মেলনে সদস্য দেশগুলোকে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার থেকে বেরিয়ে আসার জন্য অভূতপূর্ব আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু লিখিত সেই আহ্বানে এমন অস্পষ্ট ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে যে অনেক দেশ নামকাওয়াস্তে কিছু ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষান্ত দিতে পারে।

এবারের ঘোষণায় তেল, কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে ধাপে ধাপে বেরিয়ে আসার মতো কথা বলা হয়নি, যদিও শতাধিক দেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিরোধী গোষ্ঠীগুলো এই দাবি অনেক দিন ধরে জানিয়ে আসছে।

আইইএ আশা করছে, বিশ্বের সব উন্নত দেশে কয়লার চাহিদা কমবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রে কয়লার ব্যবহার ২০ শতাংশ কমবে বলে তাদের প্রত্যাশা। কিন্তু এশিয়া অঞ্চলে চাহিদা কিছুটা বাড়বে। চীন ও ভারতে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি ও জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে দেশ দুটিতে এ বছর যথাক্রমে ৫ ও ৮ শতাংশ কয়লার চাহিদা বাড়বে বলে ধারণা করছে আইইএ।

এই পরিপ্রেক্ষিতে আইইএ মনে করছে, সারা বিশ্ব কয়লা থেকে ধীরে ধীরে সরে এলেও আগামী কয়েক বছরে চীনের নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন কতটা বাড়বে, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।

স্বল্প মেয়াদে জলবিদ্যুৎ প্রাপ্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছে আইইএ। চীনের মতো দেশ সাধারণত জলবিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। এ জন্য এ বিষয়ে শেষ কথাটা বলবে চীন, এমন কথাই আইইএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে

গত সপ্তাহে চীন সরকার বায়ুর মান উন্নত করতে এক কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। সেখানে তারা নতুন পরিবেশবান্ধব জ্বালানি উৎপাদনের অঙ্গীকার করার পাশাপাশি কয়লার ব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের অঙ্গীকার করেছে। দেশটি বাতাসের জন্য বিপজ্জনক পিএম ২ দশমিক ৫ অণুকণা ২০২০ সালের তুলনায় ২০২৫ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ কমিয়ে আনতে চায়। সে জন্য তারা এখন জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। তেলভিত্তিক গাড়ির বদলে বৈদ্যুতিক গাড়ি ও সড়কপথে পণ্য পরিবহনের পরিবর্তে রেলপথে পণ্য পরিবহনে জোর দিচ্ছে তারা।

আইইএ বলছে, এত কিছুর পরও ২০২৪ সালে সারা বিশ্বে ৮০০ কোটি মেট্রিক টনের বেশি কয়লা ব্যবহৃত হবে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার প্রাক্–শিল্প যুগের তুলনায় ১ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে বর্তমানে যে হারে কয়লার ব্যবহার কমছে, তার চেয়ে আরও দ্রুতগতিতে কয়লার ব্যবহার কমাতে হবে।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus (0 )